নিউজ ডেক্স
- ৭ মে, ২০২৫ / ৩২ বার পঠিত

ইমন সরকার, ভালুকা :
পাঁচজন তরুণ—মোঃ আশিক, মোঃ রাকিব, মোঃ দেলোয়ার, মোঃ জিহাদ আর মোঃ পলাশ। পেশায় কেউ ফ্রিল্যান্সার, কেউ শিক্ষার্থী, কেউবা ব্যবসায়ী। আলাদা পেশা হলেও, একটি জায়গায় তাদের মন এক—গাজার মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
তারা সবাই ময়মনসিংহের ভালুকার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের ছেলে। সেখান থেকেই তাদের মানবিক যাত্রা শুরু।
গল্পের শুরুটা হয় মোঃ আশিকের হাত ধরে। ইনস্টাগ্রামে এক ফিলিস্তিনি ভাইয়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। কিছু ফান্ড পাঠান তিনি। ভিডিও কলে নিশ্চিত হন, টাকাটা ঠিকঠাক হাতে পৌঁছেছে, আর সঠিক কাজে লাগানোও হয়েছে। সেই ছোট্ট সাফল্যটাই সাহস জোগায় বড় কিছু করার।
এরপর ধাপে ধাপে তারা অর্থ সংগ্রহ বাড়াতে থাকেন। নিজেদের জমানো টাকা, পরিচিতজনদের সহায়তা আর স্থানীয় মানুষের অনুপ্রেরণায় তারা এখন পর্যন্ত মোট প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন গাজার মানুষের সহায়তায়।
এই অর্থ দিয়ে কেনা হয় গম, শাকসবজি, রুটি, পানি, তেল, লবণ, আলু, পেঁয়াজ—প্রয়োজনীয় খাবারের ঝুড়ি। গাজার খান ইউনিস অঞ্চলের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান আব্দুল্লাহ আর তার টিম প্রায় ৩০টি পরিবার, মানে আনুমানিক ২০০ জন মানুষের হাতে পৌঁছে দেন এই খাদ্যপণ্য।
শুরুতে অনেকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। কিন্তু গাজা থেকে যখন আব্দুল্লাহ আর ইব্রাহিম ভিডিও মেসেজ পাঠালেন, টাকা ও খাবারের প্রমাণ দেখালেন, তখন সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করল।
গাজার মানুষ কৃতজ্ঞতায় ভেসে গেছে। আব্দুল্লাহ, ইব্রাহিম আর তাদের পরিবার ভিডিও বার্তায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এমনকি আব্দুল্লাহ আশিকের ছবি দিয়ে ব্যানার বানিয়ে খাদ্য বিতরণ করেছেন। একবার ভিডিও কলে আব্দুল্লাহর মায়ের সঙ্গেও কথা বলেন আশিক।
এই মানবিক কার্যক্রমে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছেন ভালুকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। তিনি বলেন,
“আমি ভালুকার প্রতিটি মানুষকে আহ্বান জানাই—গাজার এই সংকটকালে আমরা যেন যে যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসি। এই সহানুভূতিই আমাদের সত্যিকারের পরিচয়।”
তিনি তরুণদের এই উদ্যোগকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান এবং ভবিষ্যতে যেকোনো মানবিক কর্মকাণ্ডে প্রশাসনিক পর্যায়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
গাজার আব্দুল্লাহ তার ভিডিও বার্তায় ভালুকাবাসী ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, “ভালুকা আমাদের জন্য শুধু একটি স্থান নয়, এখন এটি এক আশার নাম।”
এই সাহসী তরুণরা বর্তমানে পরিকল্পনা করছেন ভালুকার প্রতিটি মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং তহবিল সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করার। তারা চান—এই মানবিক প্রয়াস যেন বড় পরিসরে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করে যেতে পারে।
ভালুকা আজ প্রমাণ করেছে—ইচ্ছা আর সাহস থাকলে ক্ষুদ্র হাতগুলোও অনেক বড় পরিবর্তনের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
এ যেন মানবতার জয়গান, এক চিরন্তন ‘ভালুকা থেকে গাজা’ সংযোগ।