সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২১ পূর্বাহ্ন
আবু বকর সুজন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
চৌদ্দগ্রামে বন্ধুত্বের অভিনয় করে বেড়াতে এসে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে পরিবারের সকলকে অজ্ঞান করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা চান্দিশকরা গ্রামে। আহত তিনজনকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা তথ্যটি নিশ্চিত করেন তারই ছোট ভাই চা দোকানদার জাকির হোসেন।
স্ত্রানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই মাস আগে নাঙ্গলকোট থেকে খড় দিয়ে আসার পথে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার লাকসাম রোডে চান্দিশকরা পশ্চিম পাড়ার লোকমান মিয়ার চা দোকানের সামনে দাড়ায় হাকিম আলীর ট্রাক চালক। ট্রাকটির ত্রুটি মেরামত শেষ করে অনেকক্ষণ খোশগল্প করে বিদায় নিয়ে চলে হাকিম আলী। ফরিদপুরে বাড়ি এতটুকুই জানেন বন্ধু লোকমান হোসেন। এভাবে লোকমান মিয়ার সাথে হাকিম আলীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। প্রায় সময় ফরিদপুর থেকে মোবাইলে খোঁজখবর নিতেন লোকমান হোসেন ও তার পরিবারের।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যায় হাকিম আলী পৌর এলাকার কালির বাজারে ট্রাক থামিয়ে বন্ধু লোকমান হোসেনের জন্য ফরিদপুর থেকে দুইটি তরমুজ ও চার লিটার আখের রস নিয়ে চান্দিশকরায় লোকমান হোসেনের বাড়িতে বেড়াতে আসে। লোকমানের পরিবার পর্যন্ত মেহমানদারি করেন হাকিম আলীর। রাতে কৌশলে হাকিম আলী বন্ধু লোকমান ও পরিবারের সবাইকে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশানো আখের রস আর তরমুজ খাইয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর তার ঘুমিয়ে পড়েন। সেহেরী খাওয়ার সময় লোকমানের ঘরে আলো না দেখে পাশের ঘরের সবজি ব্যবসায়ী সুরুজ মিয়া লোকমানের মুঠোফোনে কল দেন। দীর্ঘক্ষণ কল রিসিভ না হওয়ায় সুরুজ মিয়ার স্ত্রী ও ছেলের বউকে লোকমানের ঘরে পাঠান। তারা দেখতে পান-লোকমানের হোসেনের ঘরের দরজা খোলা এবং লোকমানের স্ত্রী ফাতেমা বেগম শুধু বমি করতেছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে সুরুজ মিয়ার স্ত্রী ও ছেলের বউ চিৎকার করলে বাড়ির লোকজন ছুটে আসে। তারা দেখতে পান মেহমান হাকিম আলী ঘরের লোকমান হোসেন স্ত্রী ফাতেমা বেগম ছেলে আলা আমিনকে সহ সবাইকে অজ্ঞান করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে বাড়ির লোকজন আহতদের লোকমানের পরিবারের তিনজনকে উদ্ধার শেষে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে উন্নত চিকিৎসার আহত লোকমান হোসেন, তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও ছেলে আল আমিনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়েছে।
একই বাড়ির সবজি ব্যবসায়ী সুরুজ মিয়া বলেন, সেহেরীর সময় লোকমান হোসেনের ঘরে আলো না দেখে মুঠোফোনে কল করি। কিন্তু সাড়াশব্দ না পেয়ে আমার স্ত্রী ও ছেলের বউকে তাদের ঘরে পাঠিয়ে দেখি-চতুর বন্ধু নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে মূল্যবান মালামাল নিয়ে চলে যায়।
লোকমান হোসেনের ভাই চৌদ্দগ্রাম বাজারস্থ ওয়াপদা রোডের চা দোকানদার জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার ভাই লোকমান হোসেনের ক্ষনিকের বন্ধু হাকিম আলী নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ঘরের থাকা নগদ এক লাখ টাকা ও চার ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুটে নিয়ে যায়। মালামাল লুট করতেই বন্ধুত্বের ফন্দি করেছিল চতুর হাকিম আলী। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি প্রশাসনের নিকট অনুরোধ করছি’।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ জাবেদ হোসেন বলেন, নেশাদ্রব্য খাওয়ানো তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম থানার পরিদর্শক তদন্ত মোঃ গুলজার আলম বলেন, ‘সাংবাদিকদের মধ্যে তথ্য পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১৫-১২৫২৪৩