নিম্ন মানের খোয়া অপসারণে লিখিত নির্দেশনারও তোয়াক্কা করছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফাতেমা ট্রেডার্স।
* এলজিইডি তদন্ত প্রতিবেদন, জেলায় অভিযোগ দিতেই পারে।
স্বত্বাধীকারী, ফাতেমা ট্রেডার্স।
আবু বকর সুজন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি :
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বাহেরগড়া-শুভপুর সড়ক নির্মাণে নিম্ন মানের খোয়া, ইট ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে আ’লীগ নেতা অলি আহমেদ মজুমদারের মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফাতেমা ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ এবং এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলীর পরিদর্শন রিপোর্টে প্রমাণিত হওয়ায় নিম্ব মানের খোয়া, ইট উত্তোলণ এবং সোল্ডারে আরও মাটি প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেছে উপজেলা প্রকৌশলী অফিস ।
কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি এলজিইডির নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে আবারো নিম্ব মানের ইট, খোয়া ব্যবহার করে তড়িগড়ি করে দ্রæত সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী সড়কটির একাংশের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে এলজিইডি কর্তৃক নিমানের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঠিকাদার বরাবর চিঠি ইস্যু এবং জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে অবগত করার বিষয়ে অলি আহমেদ বলেন, এটা তাদের এখতিয়ার। তারা তদন্ত এবং উপরে অভিযোগ দিতেই পারে।
প্রকল্পসূত্রে ও উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার গুরুত্বপুর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলাধীন বাহেরগড়া (শাহ সাহেব) শুভপুর সড়কটি নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফাতেমা ট্রেডার্স। প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৫৫ লক্ষ ৪১ হাজার ৬’শ ৪১টাকা মূল্যের দুই হাজার দশ মিটার আয়তনের সড়কটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্পটি ৭ই নভেম্বর শুরু এবং ৮ই আগষ্ট ২০২৫ খ্রি. শেষ হওয়ার নির্দেশনা ছিল। নি মানের কাজের অভিযোগে গত ১৬ই জানুয়ারী এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র রায় প্রদত্ত পরিদর্শন রিপোর্টের আলোকে নিমানের খোয়া, ইট উত্তোলণ করে নতুন ভাবে নির্মাণ কাজ শুরু এবং সোল্ডারে মাটি প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করলেও তার তোয়াক্কা না করে নির্মাণ কাজ চলমান রেখেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে (২৮ জানুয়াী) মঙ্গলবার বিকেলে পরিদর্শনে দেখা যায়, পূর্বের অভিযোগ এবং তদন্তের ভিত্তিতে পূর্বের খোয়া অপসারণ করে টেন্ডার অনুযায়ী ভালো খোয়া ব্যবহারের নির্দেশনা প্রদান করা হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবারো নিমানের খোয়া ব্যবহার করে দ্রæত সড়কটির নির্মাণ কাজ করছে। স্থানীয় এলাকাবাসী আবারো বাঁধা দিলেও তারা তোয়াক্কা করছে না।
স্থানীয় যুবদল নেতা ইব্রাহীম খলিল জানান, এলজিইডির তদন্তে নিমানের খোয়া ব্যবহার প্রমাণিত হওয়ার পরও ফাতেমা ট্রেডার্স গায়ের জোরে আরও নিমানের ইট, খোয়া ব্যবহার করে সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে।
সলাকান্দি গ্রামের সত্তোর্ধ বৃদ্ধ আবদুল মান্নান জানান, ৩টি ইউনিয়নের সংযোগ সড়ক এটি। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে যেভাবে নিমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় সড়টি ৫-৬মাসও স্থায়ী হবেনা।
এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র রায় বলেন, গত ১৫ই জানুয়ারী সড়েজমিনে পরিদর্শন করে নিমানের খোয়া ব্যবহার এবং সোল্ডারে মাটি না থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ১৬ই জানুয়ারী অফিস থেকে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফাতেমা ট্রেডার্স ২৮শে জানুয়ারী পর্যন্তও অফিসের নির্দেশনা না শুনে নিমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কাজটি শেষ করার চেষ্টা করছে। আমরা ইতোমধ্যে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিষয়টি অবহিত করেছি।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফাতেমা ট্রেডার্স এর স্বত্বাধীকারী আ’লীগ নেতা অলি আহমেদ মজুমদার বলেন, স্থানীয় কিছু যুবক একসাথ হয়ে আমাকে ডিস্ট্রার্ব করছে। সবকিছু সাংবাদিকদের বলা যাবেনা। এলজিইডি নির্মাণাধীন সড়ক পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে পারে এমনকি জেলাতেও অভিযোগ দিতে পারে। এটা তাদের এখতিয়ার।
এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান জানান, প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পরপরই আমরা মনিটরিংয়ে রাখি। নিমানের খোয়া ব্যবহার ও সোল্ডারে মাটি না থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফাতেমা ট্রেডার্সকে অফিসে ডেকে মৌখিকভাবে সতর্ক করি এবং পরবর্তীতে গত ১৬ই জানুয়ারী লিখিত চিঠি প্রদান করি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি আবারো নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করে অফিস সময়ের অগোচরে সড়কটি তরিগড়ি করে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে। আমরা ইতোমধ্যে অফিসিয়ালী জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকেও অবহিত করেছি।