দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
দোয়ারাবাজার সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম, দোকানপাট লুট, গবাদিপশু ও ফসল ছিনতাই এবং ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় নিরীহ মানুষকে হয়রানির প্রতিবাদে ৬ গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ মানববন্ধন কর্মসুচি পালন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের পূর্ব সোনাপুর গ্রামের খেলার মাঠে আয়োজিত প্রতিবাদ সভা শেষে এক বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে নরসিংপুর ইউনিয়নের হাবিব নগর, পূর্ব সোনাপুর, পুরান বস্তি, সারপিন পাড়া, উত্তর সোনাপুর এবং ছাতক উপজেলার লুভিয়া গ্রামের সহস্রাধিক নারী-পুরুষসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন।।
প্রতিবাদসভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, ছাতক উপজেলার ইছামতি বাজারে সম্প্রতি সংঘটিত দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত মানিক মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দোয়ারাবাজার সীমান্ত এলাকায় ছাতক উপজেলার বনগাঁও দারোগাখালী এলাকার একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে প্রতিশোধমূলক হামলা লুটপাট ও হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে।
স্থানীয়দের দাবি, বনগাঁও দারোগা খালী গ্রামের ইলিয়াস আলী, সিরাজ মৌলানা, শফিক মেম্বার ও রুস্তম আলীর নেতৃত্বে একদল উশৃঙ্খল ব্যক্তি নরসিংপুর ইউনিয়নের হাবিব নগর, পূর্ব সোনাপুর, পুরান বস্তি, সারপিন পাড়া, উত্তর সোনাপুর এবং ছাতক উপজেলার লুভিয়া গ্রামে ধারাবাহিকভাবে হামলা ও লুটপাট চালায়।
গ্রামবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা রাতের আঁধারে ও দিনের বেলায় পাকা ধান কেটে নিয়ে যায়, দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়, এলসির চুনাপাথর লুট করে নিয়ে যায় এবং গবাদিপশু ছিনিয়ে নেয়। এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে অনেকেই এখনও আতঙ্কে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মামলার আতঙ্কে স্থবির জনজীবন সবচেয়ে উদ্বেগজনক অভিযোগ হলো—ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন অন্তত অর্ধশতাধিক নিরীহ মানুষকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ব্যবসায়ীরা মামলা ও হামলার ভয়ে ইছামতি বাজারে দোকানপাট খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। সীমান্ত এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, একের পর এক গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কার্যকর প্রশাসনিক উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। স্থানীয়দের মতে, দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কঠোর অবস্থান ও নিরপেক্ষ তদন্ত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।
বর্তমান ইউপি সদস্য মো. ধনমিয়া বলেন, 'ঘটনার সঙ্গে যাদের কোনো সম্পর্ক নেই, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।'
ব্যবসায়ী সৈয়দ জামান নিপু বলেন, এ ঘটনা কে কেন্দ্র করে চুনা পাথর ব্যবসায়ীদের এলসি স্টেশনে আমদানী করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত সহ সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারণে সীমান্ত এলাকার শত শত শ্রমিক বিকারগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দ্রুত ব্যবসায়িদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে সীমান্ত এলাকায় সহিংসতার চক্র থামবে না।'
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা অবিলম্বে লুটপাট ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন সীমান্ত এলাকায় জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
বক্তারা স্পষ্ট করে জানান, দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ না এলে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।