রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:০৫ অপরাহ্ন
জয়নাল আবেদীন জহিরুল, মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের প্রশাসনে এমনও কিছু কর্মকর্তা আছেন, যারা শুধু দায়িত্ব পালন করেন না, বরং তাদের সততা, নিষ্ঠা আদর্শিক কর্মকাণ্ড, সুশিক্ষা ও দর্শন প্রশাসনকে যেমন নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায় ঠিক তেমনি একটি অঞ্চলকেও সমউচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারেন তাদের মানবিক গুণাবলির মাধ্যমে।
সুনামগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া তেমনি একজন বহুগুণের অধিকারী মানবিক কর্মকর্তা। যিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ সুনামগঞ্জকে বহুদিক দিয়ে এগিয়ে নিতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন।
ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলায় এক সাধারণ মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া ড. ইলিয়াস মিয়া ছোটবেলা থেকেই উচ্চ লক্ষ্য নিয়ে জীবনের পথ শুরু করেন। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডারের ২৫তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ২০০৬ সালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, চট্টগ্রামে শিক্ষানবিশ সহকারী কমিশনার ও তৃতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
প্রাথমিক দায়িত্বকাল থেকেই শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার চিত্র ফুটে উঠেছে তার কাজে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে ঝালকাঠি সদর ও বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জনসাধারণের সুবিধা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে অর্থ বিভাগে সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও তার দক্ষতার পরিচয় স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্গম অঞ্চলের বাস্তবতা ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে সুনাম অর্জন করে এই দূর্গম অঞ্চলেও জনবান্ধব প্রশাসনের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নগর প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও আইন প্রয়োগে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
২০২১ সালে উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) সেল এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও কূটনৈতিক আলোচনায় তার সততা,শিক্ষা ও গবেষণার অভিজ্ঞতা কার্যকর প্রমাণিত হয়। জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের WTO অনুবিভাগে উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
শিক্ষাজীবনে ড. ইলিয়াস মিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে জাপানের Ritsumeikan University থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার এই আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও দক্ষতা তাকে একজন আন্তর্জাতিক মানের প্রশাসক ও গবেষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সুনামগঞ্জে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও জনসেবার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। উচ্চবিলাসী জীবন পরিহার করে তিনি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময়ে তার সদালাপী ও নম্র আচরণ প্রশংসিত হয়েছে।
ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, সুনামগঞ্জ শুধু একটি জেলা নয়, এটি প্রাকৃতিক সম্পদের সম্ভাবনার বিস্তৃত জনপদ। সঠিক পরিকল্পনা, স্বচ্ছ প্রশাসন ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলে সুনামগঞ্জকে একটি মডেল জেলায় রূপান্তর করা সম্ভব। আমার লক্ষ্য হলো প্রশাসনকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, সেবা গ্রহণ সহজ ও হয়রানিমুক্ত করা এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি মানবিক, উন্নত ও সম্ভাবনাময় সুনামগঞ্জ গড়ে তুলতে পারব।
ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার নেতৃত্বে সুনামগঞ্জে প্রশাসনিক দক্ষতা ও উন্নয়ন কার্যক্রম নতুন মাত্রায় পৌঁছাচ্ছে—যা জেলার মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩