মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৬ অপরাহ্ন
আবু তাহের, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে মহান বিজয় দিবস ২০২৫।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী।
এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে চির উন্নত মম শির এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপাচার্য। একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, অনুষদীয় ডিন, শিক্ষক সমিতি, বিভিন্ন বিভাগ, বিভিন্ন হল, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষার্থী, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ হতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিজয় শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
শোভাযাত্রা শেষে পুরনো প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
উপাচার্য বলেন, ‘মহান বিজয় দিবসের এই দিনটি আমাদের চির গৌরবের। যেসব কৃতিত্ব অর্জন করলে গৌরবান্বিত হওয়া যায়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তেমনই একটি বিজয়ের মুহূর্ত। যেমন করে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে ১৯৭১ সালে সবাইকে একত্রিত করেছিল তেমনিভাবে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে ২০২৫ সালের এই বিজয় দিবস তেমনি করে যেন অনাগত দিনের জন্য আমাদেরকে ঐক্যদ্ধ রাখে। স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সব ধরনের বৈষম্য দূর করা। চরম বৈষম্যের বিরুদ্ধেই জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজয় অর্জন করে। আজও সব বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য ঐক্য জরুরি।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা বেশি হলেও সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে। নির্বাচনে বিজয়ী হয়েও ক্ষমতা দেওয়া হয়নি এবং সাংস্কৃতিকভাবে অন্য ভাষা ও সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে ভারত উপমহাদেশ স্বাধীন, সার্বভৌম ও স্বয়ং সম্পূর্ণ ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা এসে আমাদের উপর প্রভুত্ব করে বৈষম্য শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টেও বৈষম্যের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। এই বৈষম্য অব্যাহত থাকলে আবারও ২০২৪ এর পূণরাবৃত্তি হতে পারে। ১৯৭১ বা ২০২৪ এর শিক্ষা নিয়ে আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি এবং মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে স্বাধীন বাংলাদেশকে ন্যায়, সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে বৈষম্যহীন এক সুন্দর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি এটাই আজ বিজয় দিবসের প্রত্যাশা।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন সরকার, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ এমদাদুর রাশেদ (রাশেদ সুখন), সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন।
আলোচনা সভায় সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন ও বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ এইচ এম কামাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান।
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. শফিকুল ইসলাম, দোলন-চাঁপা হলের প্রভোস্ট উম্মে ফারহানা, গ্রন্থাগারিক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোহা. আজিজুর রহমান এবং কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিজয় দিবস উপলক্ষে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন হল ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের নানা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া কেক কাটা ও সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালা শেষ হয়। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন আলোকসজ্জিত করা হয়।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩