শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:০৭ পূর্বাহ্ন
সানজানা তালুকদার, কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত আন্তঃহল বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২৫-এর ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে মুখোমুখি হয় বাংলা ব্লকড (বিজয়–২৪ হল) ও সুনীতি–A (সুনীতি–শান্তি হল) দল।
বির্তক প্রতিযোগিতায় স্পিকার হিসেবে ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো: তরিকুল ইসলাম। বির্তকে বিজয়ী দল হলো বিজয়- ২৪ হলের দল বাংলা ব্লকেড। সেরা বিতার্কিক হয়েছে আবছার উদ্দিন ইফতি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি (CoUDS)-এর সার্বিক সহযোগিতায় আয়োজিত এ প্রতিযোগিতা ঘিরে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। আয়োজক হলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুক্তি, উপস্থাপনাশৈলী এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে দক্ষতার ভিত্তিতে বিজয়ী দল নির্ধারণ করা হয়।
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা নিয়মিতভাবে হতে পারে কি না—এ নিয়ে অনেকের সংশয় থাকলেও প্রথম আন্তঃহল বিতর্ক প্রতিযোগিতা তার সফল বাস্তব উদাহরণ তৈরি করেছে। আয়োজকদের আন্তরিকতা, উদ্দেশ্য ও নিষ্ঠা স্পষ্ট হয়েছে পুরো আয়োজনজুড়ে। তিনি মনে করেন, বিতর্ক এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে যুক্তিবোধ, খণ্ডন, বিশ্লেষণ—এসবের নিয়মিত চর্চা মানুষকে আরও পরিশীলিত করে। এজন্য তিনি কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।’
তিনি আরও বলেন,’পাঁচটি হল থেকেই অসাধারণ সাড়া পাওয়া গেছে এবং প্রতিটি দলই জয়ের জন্য সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, যা অত্যন্ত সন্তোষজনক। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল প্রথমবারের মতো আন্তঃহল বিতর্ক আয়োজন করতে পেরে গর্বিত। ফাইনালে “বিজয়–২৪ হল” ও “সুনীতি–শান্তি হল” দুই দলের প্রতিযোগিতা ছিল অত্যন্ত মানসম্মত। বিচারকদের রায়ের ভিত্তিতে বিজয়–২৪ হল চ্যাম্পিয়ন হলেও সুনীতি–শান্তি হলের মেয়েরা দারুণ পারফরমেন্স করে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। জয়–পরাজয় নয়, অংশগ্রহণ ও আগ্রহই সবচেয়ে বড়—উল্লেখ করে তিনি দুই দলকেই অভিনন্দন জানান এবং ভবিষ্যতে এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানান।’
বির্তক প্রতিযোগিতার স্পিকার ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো: তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘যে কোনো আয়োজন—কনসার্ট হোক বা বিতর্ক—রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। ভোট বা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও পরিষ্কার হওয়া জরুরি যে সিদ্ধান্তটি প্যানেলভিত্তিক নাকি ব্যক্তিভিত্তিক; ‘প্যানেলকে ভোট দেব না কিন্তু প্যানেল থেকে কাউকে নেব’—এমন দ্বৈত অবস্থান গ্রহণযোগ্য নয়। বিতর্কের মঞ্চে রাজনীতি নয়, যুক্তি ও ব্যক্তিগত দক্ষতাই প্রধান। তাই রাজনৈতিক বিভ্রান্তি দূর করতে ও ন্যায়সংগত পরিবেশ বজায় রাখতে একটি ক্লারিফিকেশন কমিটি থাকা প্রয়োজন, যারা নিয়ম ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।’
কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম আন্তঃহল বিতর্ক প্রতিযোগিতা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় এটি সবার জন্যই এক গর্বের অর্জন। ছেলেদের হলে মেয়েদের অংশগ্রহণ এবং তাদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ নিশ্চিত হওয়াকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক সংস্কৃতির দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। তার মতে, এ আয়োজন হল–সংস্কৃতির প্রচলিত কিছু মানসিক বাধা ভাঙতে সাহায্য করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে থেকে শুধুই বিতর্কের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। বিজয়ী ও পরাজিত উভয় দলকেই অভিনন্দন জানিয়ে সভাপতি বলেন, প্রথম আয়োজনেই এমন সাফল্য অত্যন্ত উৎসাহজনক। কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির পক্ষ থেকে তিনি সকল অংশগ্রহণকারী, সহযোগী ও আয়োজন–সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বিতর্ক অঙ্গনকে আরও সমৃদ্ধ করার আহ্বান জানান।’
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩