মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
ভোলাহাটে ট্রলির ধাক্কায় শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যু ভর্তি পরীক্ষা বিবেচনায় জাবির শীতকালীন ছুটি স্থগিত মুকসুদপুরে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস-২০২৫ পালন শিবগঞ্জ বাজারে জামায়াতে ইসলামীর পরিচ্ছন্নতা অভিযান জকিগঞ্জ সীমান্তে বিজিবির টানা অভিযানে ইয়াবা, শাড়ি-লেহেঙ্গা ও কম্বলসহ পাঁচজন আটক ডিমলায় ভুমি সেবায় গনশুনানী অনুষ্ঠিত বান্দরবানে পর্যটন সড়ক বেহাল, জনশূন্য পাহাড়ে সড়ক উন্নয়ন ডিমলায় বেগম রোকেয়া দিবসে র‍্যালি ও আলোচনা সভা শেরপুরের শ্রীবরদীতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস পালিত চৌদ্দগ্রামে বেগম রোকেয়া দিবসে পাঁচ জয়ীতাকে পুরস্কার কুবিতে নানা আয়োজন ও যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হয়েছে বরিশাল মুক্ত দিবস সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী আনিসুল হকের পক্ষে লিফলেট বিতরণ শিবচরে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার এমপি নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গিয়ে ভুল করলে ধরিয়ে দিবেন, কৃতজ্ঞ থাকব। নাচোলে জামায়াত প্রার্থী- ড. মিজানুর রাউজান থানা, নোয়াপাড়া পুলিশ ক্যাম্প ও মদুনাঘাট তদন্ত কেন্দ্র পরিদর্শনে পুলিশ সুপার চবিতে ভর্তিচ্ছুদের আবেদন এক লাখ ছাড়াল শিবগঞ্জে নয়ন আলী নামের এক যুবদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা রাতের ভোট আর হতে দেওয়া হবে না, আগামীর প্রধানমন্ত্রী হবেন ডা. শফিকুর রহমান- ড. ফয়জুল হক নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সোসাইটির নতুন কমিটি গঠন কুবি’র আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সম্মেলনে অ্যাবস্ট্রাক্ট জমাদানের সময়সীমা বৃদ্ধি

বান্দরবানে পর্যটন সড়ক বেহাল, জনশূন্য পাহাড়ে সড়ক উন্নয়ন

এলেক্স বড়ুয়া, বান্দরবান প্রতিনিধিঃ

বান্দরবান জেলার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র নীলাচল। কিন্তু সেখানে যাতায়াতের প্রধান সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। অথচ ওই গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংস্কার না করে উন্নয়নের নামে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে জনবসতিহীন একটি এলাকায় সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে—যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, জেলা সদরের যৌথ খামার এলাকা থেকে নীলাচল হয়ে টাইগার পাড়া পর্যন্ত সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দে ভরা। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ও স্থানীয় মানুষ এই ভাঙাচোরা সড়ক ব্যবহার করেন। কিন্তু ওই সড়কের সংস্কার না হয়ে উন্নয়নকাজ চলছে টাইগার পাড়া হয়ে রুপালি ঝর্ণা ও সিনিয়র পাড়া পর্যন্ত একটি প্রায় জনবসতিহীন এলাকায়।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রকল্প, ব্যয় প্রায় ৮ কোটি টাকা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বান্দরবান জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ‘যৌথ খামার থেকে টাইগার পাড়া পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর টেন্ডার আহ্বান করা হয়। প্রকল্প অনুযায়ী ৩ কিলোমিটার ২৭০ মিটার সড়ক উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৩২ হাজার ২৩৭ টাকা।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মিলন কোম্পানি। তার মালিকানাধীন ‘হিমু কনস্ট্রাকশন’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এদিকে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও কীভাবে এই নিষিদ্ধ সংগঠনের একজন ওয়ার্ড সভাপতির প্রতিষ্ঠান সরকারি কাজ পেল—তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

টেন্ডারে এক সড়ক, নির্মাণ হচ্ছে অন্য সড়ক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ঠিকাদার বলেন, “প্রকল্পের চুক্তিপত্রে যৌথ খামার থেকে টাইগার পাড়া পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের কথা থাকলেও বাস্তবে কাজ হচ্ছে ভিন্ন একটি এলাকায়। এটি টেন্ডারের শর্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

টাইগার পাড়ার বাসিন্দারা অজানা কারণে মুখ খুলতে না চাইলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, “নীলাচল সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। হাজার হাজার মানুষ আর পর্যটক এই রাস্তা ব্যবহার করে। কিন্তু সেই সড়কে কাজ না করে বরাদ্দের টাকা ব্যবহার করা হচ্ছে জনবসতিহীন এলাকায়। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।”

আরো এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “টাইগার পাড়া থেকে রুপালি ঝর্ণা পর্যন্ত সড়কজুড়ে কোনো গ্রাম, স্কুল বা অফিস নেই। সাধারণ মানুষ এই রাস্তা ব্যবহারই করে না। এতে আমাদের কোনো উপকার হবে না।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, এই সড়ক নির্মিত হলে মূলত উপকৃত হবেন কিছু প্রভাবশালী রিসোর্ট ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা। সরকারি অর্থে তাদের ব্যক্তিগত স্থাপনার সংযোগ সড়ক তৈরি হচ্ছে কিনা—তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, কাজ শেষ হলে আশপাশে কয়েকটি ব্যক্তিমালিকানাধীন রিসোর্ট গড়ে উঠবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থানে রিসোর্ট নির্মাণের কাজ চলছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, টাইগার পাড়া থেকে রুপালি ঝর্ণা ও সিনিয়র পাড়া পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকার সড়ক নির্মাণে পাহাড় কেটে এবং বনজ গাছ কেটে ভরাট করা হচ্ছে। সাইট ওয়ালের পাশ থেকেও পাহাড়ের মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে, যা পরিবেশ ঝুঁকি তৈরি করছে।

পাহাড় কাটার বিষয়ে বান্দরবান জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, “সড়ক নির্মাণে পাহাড় কাটার অভিযোগ পেয়েছি। দেড় বছরে এ ধরনের কোনো অনুমতির আবেদন আমাদের কাছে আসেনি। লিখিত অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটা আইনত অপরাধ।”

এ বিষয়ে এলজিইডির বান্দরবান জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তাসাউর বলেন, “পার্বত্য এলাকায় আগে রাস্তা বানানো হয়, পরে জনবসতি গড়ে ওঠে। যে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে, তা টাইগার পাড়া হয়ে রুপালি ঝর্ণা ও রেইচা মেইন সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে, যা একটি বিকল্প পথ হিসেবে কাজ করবে।”

তিনি আরও বলেন, “সড়কের পাশে কারো রিসোর্ট বা বাগান আছে কিনা, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। সড়কটি ২০১৩ সালেই এলজিইডির গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। নামকরণে ভুল হয়েছিল।”

স্থানীয়দের আশঙ্কা, নতুন এই সড়কটি বান্দরবানের প্রবেশমুখে অবস্থিত রেইচা আর্মি ক্যাম্পের ৫০ মিটার সামনে গিয়ে যুক্ত হবে। এতে করে চেকপোস্ট এড়িয়ে মাদক, চোরাই সিগারেটসহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্য পাচারের ঝুঁকি বাড়বে।

স্থানীয়দের দাবি, আগে নীলাচল-টাইগার পাড়া এলাকার প্রধান সড়কটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা হোক। প্রকৃত জনস্বার্থের বাইরে এসে যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন বন্ধ করা হোক।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩