ফয়ছল আহমদ নুমান, কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধিঃ
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নভাগী গ্রামে রাতের অন্ধকারে অবৈধ পাথর ও বালুবাহী ট্রাক্টরের দাপটে গ্রামীণ সড়কগুলো ধ্বংসের প্রান্তে পৌঁছেছে। উপজেলা প্রশাসন শাহ আরেফিন সড়কে ভোলাগঞ্জ মোড়ে বেষ্টনী বসালেও পাথরখেকো সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমেনি; বরং গভীর রাতে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, রাত ১২টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত সোনাই নদীর বালু ও শাহ আরেফিন টিলা থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথর বোঝাই ট্রাক্টর ও ট্রলি গ্রামের বুক চিরে চলাচল করছে। সরু এই গ্রামীণ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ৭–৮টি গ্রামবাসীর যাতায়াত ঘটে, যেখানে সিএনজি ও মোটরসাইকেলও নিরাপদে চলতে পারছে না। ১৫–২০ টনের ভারী যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচলে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে, ঘরের মেঝে পর্যন্ত কাঁপে এবং শিশুসহ বয়স্করা শ্বাসকষ্টে ভুগছে।
সবচেয়ে করুণ চিত্র বতুল্লা মিয়ার বাড়ি থেকে নভাগী ব্রিজ পর্যন্ত। একসময় পাকা এই রাস্তার অস্তিত্ব আজ শূন্য। বড় বড় গর্ত, ভাঙা ইটের স্তূপ এবং ধুলোয় দমবন্ধ করা দৃশ্য যেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত কোনো অঞ্চল। স্থানীয়রা বলছেন, “এটা আর রাস্তা নয়, পাথরখেকোদের বানানো মৃত্যুফাঁদ।”
নভাগী গ্রামের সাবেক মেম্বার মন্তাজ উদ্দিনের অটো রাইস মেইল থেকে বটেরতল মাদ্রাসা পর্যন্ত রাস্তা সামান্য ভালো থাকলেও অবৈধ ট্র্যাক্টর ও ট্রলির তাণ্ডবে দ্রুত ভেঙে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় যাতায়াত করে। রাস্তার এই ভয়াবহ অবস্থায় তাদের জন্য চলাচল মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
নভাগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিন শতাধিক শিশু এই রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। রাস্তার এই ভয়াবহ অবস্থায় তাদের চলাচল মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। দ্রুত সংস্কার এবং অবৈধ যানবাহনের চলাচল বন্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা অনিবার্য হবে।”
গ্রামের প্রবীণ মুরব্বী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আখরম আলী বলেন, “অনেকবার নিষেধ করেছি, অনুরোধ করেছি—কিন্তু কোনো ফল নেই। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এই ভয়াবহতা থামানো সম্ভব নয়।”
প্রবীণ মুরব্বী বতুল্লা মিয়া বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে গ্রামের নিরাপত্তা শেষ হয়ে যাবে। দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”
পাড়ুয়া আনোয়ারা উচ্ছ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী মামুন আহমদ বলেন, “আমরা প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে কলেজে যাই। ট্র্যাক্টরের উপস্থিতিতে কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ভয় পেয়ে রাস্তার নিচে নামতে হয়। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা কার কাছে বিচার চাইব?”
৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, “আমরা সাধারণ জনগণ নিয়ে তাদের আটকাতে পারছি না। অসহায় হয়ে পড়েছি। আর কিছু দিন এভাবে চললে রাস্তার অস্তিত্বই শেষ হয়ে যাবে। প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিন মিয়া বলেন, “ওই এলাকায় রাতের বেলায় অবৈধ পাথর–বালুবাহী ট্র্যাক্টর চলাচল করছে—এ বিষয়টি আমরা আগে জানতাম না। এখন বিষয়টি জানার পর আমরা বিষয়টি খুব গুরুত্বসহকারে দেখছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং জনদুর্ভোগ কমাতে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি রতন শেখ জানান, “এখন আমরা বিষয়টি জেনেছি। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দ্রুত অভিযান চালানো হবে, ইনশাআল্লাহ।”
নভাগী গ্রামের মানুষজনের জন্য রাতের এই দাপট যেন প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই। প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া গ্রামের সরু রাস্তাটি খুব দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাবে।