মাহবুব হাসান, নলছিটি প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠি জেলার নলছিটিতে সুগন্ধা নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল এক সময়ের এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম মোহাম্মদীয়া অয়েল এ্যান্ড রাইচ মিল। ব্রিটিশ আমলে পাকিস্তানি ব্যবসায়ী আমিন আনোয়ার নলছিটির কল বাড়ি এলাকায় কয়েক একর জমি ক্রয় করে এই মিল গড়ে তোলেন। স্থাপনার সময় মিলটি এশিয়ার বৃহত্তম হিসেবে খ্যাতি পায়।
মিলটির কারণে নলছিটি ও ঝালকাঠিতে বাণিজ্যের এক নতুন যুগ শুরু হয়। চাল, ডাল, সুপারি, লবণ, নারিকেল ও তেতুলের জন্য অঞ্চলটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে। ভারতের কলকাতার বড় ব্যবসায়ীরা নলছিটিতে ব্যবসা সম্প্রসারণের সঙ্গে যুক্ত হন। এই কারণে নলছিটিকে তখন ‘দ্বিতীয় কলকাতা’ বলে অভিহিত করা হতো।
বৃটিশ শাসনামলে নলছিটিতে সদর দপ্তর স্থাপন এবং ১৮৬৫ সালে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। ভারতীয় হিন্দু, মগ ও চীনা ব্যবসায়ীরা নলছিটিতে আসা-যাওয়া করতেন, আর ষ্টীমার ঘাটের নির্মাণে বাণিজ্যিক সুবিধা আরও বৃদ্ধি পেত।
প্রবীণদের কথায়, তিন শতাধিক তৈলের ঘানি ও অটো রাইচ মিল চালু থাকাকালে নলছিটির কয়েক মাইল পর্যন্ত মিলের কম্পন অনুভূত হতো। মিলের হুইসেল ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যেত।
স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক কারণে মিলটি তার পুরোনো জৌলুশ হারাতে থাকে। মূল মালিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং সরকারের পাওনা পরিশোধে গড়িমসির কারণে অনেকেই মিলটি ত্যাগ করে চলে যান। বর্তমানে মিলটির অতীত গৌরব ইতিহাসের অংশ হিসেবে শুধু স্মৃতিতে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।
মিলটির ইতিহাস নলছিটির অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং সামাজিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষী হিসেবে এখনও স্থান করে রেখেছে।