কুয়েট প্রতিনিধিঃ
গুগলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের সুযোগ পেয়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সেতু কুমার বসাক। ঠাকুরগাঁওয়ে জন্ম নেওয়া বাবুল বসাক ও রিতা বসাকের সন্তান সেতুর এ অর্জন দেশজুড়ে তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার নতুন গল্প হয়ে উঠেছে।
পাবনা ক্যাডেট কলেজে পাঠ শেষ করে তাঁর লক্ষ্য ছিল বুয়েট। কিন্তু ভাগ্যের মোড় ঘুরে তাঁকে নিয়ে আসে কুয়েটের সিএসই বিভাগে। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর প্রযুক্তি-ভিত্তিক যাত্রার প্রথম বড় পদক্ষেপ।
শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই তিনি ব্যতিক্রমী দক্ষতা দেখিয়েছেন অ্যালগরিদম, সমস্যা সমাধান ও প্রোগ্রামিং–এ। কুয়েটে পড়ার সময়ই তিনি তৈরি করেন বেশ কয়েকটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ এবং গবেষণামুখী একাধিক প্রজেক্ট, যা তাঁকে শিক্ষক ও সহপাঠীদের কাছে আলাদা পরিচিতি দেয়। কুয়েটে সিজিপিএ ৩.৯০ পেয়ে তিনি বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।
ডিগ্রি শেষ করে সেতু যোগ দেন ইনোনসিস সল্যুশনস সফটওয়্যার কোম্পানিতে। কর্মজীবনের মধ্যেই আসে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় সুযোগ—যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ফুল-ফান্ডেড পিএইচডি স্কলারশিপ। সেখানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিকিউরিটি বিষয়ে গবেষণা করতে করতে তিনি যুক্ত হন বিভিন্ন উচ্চমানের গবেষণা প্রকল্পে। তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তৈরি হয় তাঁর নতুন দক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক মানের পেশাদার অভিজ্ঞতা।
২০২৫ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করার দুই দিনের মাথায় তিনি যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফিনটেক জায়ান্ট ফিডেলিটি ইনভেস্টমেন্টসে সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। সেখান থেকেই তিনি লক্ষ্য স্থির করেন গুগলে কাজের—এবং সব ধাপ সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে অর্জন করেন তাঁর স্বপ্নের চাকরি।
গুগলে যোগদানের মুহূর্ত নিয়ে সেতু আবেগভরে বলেন, “গুগলের ই-মেইল যখন পেলাম, তখন পূজার ছুটিতে বাড়ি ফিরছিলাম। প্লেন থেকে নেমে আব্বুকে যখন খবরটা দিলাম—ওটাই আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময়।”
গুগলে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন,“যারা সিএসই পড়েন, তাঁদের কাছে গুগলই ড্রিম জব। এখানে কাজের পরিবেশ, সুবিধা, ওয়ার্ক কালচার—সবই অন্যরকম। খুব ভালো লাগছে।”
গুগলে কাজের স্বপ্ন দেখা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ— “যে বিভাগেই পড়ুক না কেন, গুগলে যেতে চাইলে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়াতে হবে। প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষতাই সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।”
ঠাকুরগাঁও থেকে সিলিকন ভ্যালির সানিভেল—এই দীর্ঘ পথ সেতুর জীবনে যোগ করেছে অধ্যবসায়, সংগ্রাম ও সাফল্যের নতুন অধ্যায়। তাঁর এ অর্জন দেশের তরুণদের স্বপ্ন দেখার সাহস যোগাবে, প্রযুক্তিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সামনে নতুন দিকনির্দেশনা হয়ে উঠবে।