সাকিব হোসেন, দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পদ্মা ব্যাংক শাখায় দীর্ঘদিন ধরে টাকা উত্তোলন করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন প্রায় কয়েক হাজার গ্রাহক। প্রতিদিন ব্যাংকে এসে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। জরুরি প্রয়োজনেও তারা নিজেদের সঞ্চয় তুলতে পারছেন না—ফলে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে।
উপজেলা সদরের সরকারি জনতা কলেজসংলগ্ন পদ্মা ব্যাংক শাখাটি দীর্ঘদিন ধরে চার হাজারের মতো গ্রাহকের লেনদেন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে ব্যাংকটির কার্যক্রম ব্যাহত হতে শুরু করে। নতুন আমানত গ্রহণ বন্ধ রয়েছে, পাশাপাশি পুরোনো ডিপোজিটও ফেরত দিচ্ছে না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ফলে দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে গ্রাহক ভোগান্তি।
নতুন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি সার্জেন্ট (অব.) এসএম ফজলুল হক জানান, তার ও পরিবারের চার সদস্যের অ্যাকাউন্টে প্রায় ২৩ লাখ টাকা রয়েছে। কিন্তু চেক দিলেও দুই হাজার টাকার বেশি পাওয়া যায় না, সেটিও পেতে সপ্তাহজুড়ে ঘুরতে হয়।
রাইসমিল ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা হাওলাদার বলেন, জমি বিক্রির ৯ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রাখার পর থেকে তিনি চরম অনিশ্চয়তায় আছেন। মাসে মাত্র দুই হাজার টাকা তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে ঘুরিয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আংগারিয়া ইউনিয়নের বাহেরচর এলাকার গ্রাহক মো. জসিম উদ্দিন জানান, চিকিৎসার জন্য জরুরি টাকা প্রয়োজন। কিন্তু ৫ লাখ টাকা জমা থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিচ্ছে—টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।
লেবুখালির গ্রাহক মো. রিপন বলেন, “দেড় হাজার টাকা খরচ করে দশ মাস ধরে ঘুরছি। অথচ মাত্র দুই হাজার টাকা তুলতে পেরেছি।”
শ্রীরামপুরের মফিজ গাজী জানান, প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য জমা রাখা টাকাও তুলতে পারছেন না। একই ধরনের অভিযোগ করেন পিরতলা বাজারের ব্যবসায়ী আবুল বাশার, মো. হোচেন আলী ও মোশারফ হোসেনসহ অনেকেই। তাদের দাবি—ব্যাংক কর্মকর্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘টাকা নেই, এলে দেওয়া হবে।’
এই পরিস্থিতি নিয়ে জানতে দুমকি শাখার ব্যবস্থাপক শাহিনুর আক্তার ও ব্যাংকের পাবলিক রিলেশন বিভাগে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি।
স্থানীয়দের আশঙ্কা—দ্রুত লেনদেন স্বাভাবিক না হলে তাদের অনেকেই বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।