মোহাম্মদ সেলিম, ঈদগাঁও (কক্সবাজার) প্রতিনিধি:
পানি ভেবে ভুলক্রমে এসিড খেয়ে স্বামীর মৃত্যুর ৩ ঘণ্টা পর স্ত্রী জন্ম দিলেন পুত্র সন্তান; তবে স্ত্রী এখনো জানেন না স্বামীর মৃত্যুসংবাদ।
এমন এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাঁইশারী ইউনিয়নের করলিয়ামুরা এলাকার এক শ্রমিক পরিবারে।
গতকাল ১৬ নভেম্বর বিকেলের শান্ত সময়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে খাবার খেতে বসেছিলেন রাবারবাগানের শ্রমিক নুরুল আলমের বড় ছেলে শাহজাহান। খাওয়ার ফাঁকে তৃষ্ণা পেয়ে পাশে রাখা বোতল থেকে এক ঢোক পানি পান করেন তিনি। তবে সেই বোতলে পানি নয়, ভর্তি ছিল এসিড। এসিড গিলে ফেলতেই শুরু হয় ভয়াবহ যন্ত্রণা।
পরিবারের লোকজন ছুটে এসে তাকে দ্রুত ঈদগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কয়েক ঘণ্টার যন্ত্রণাদায়ক লড়াই শেষে রাত ১১টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শাহজাহান।
কিন্তু এই মৃত্যুসংবাদ এখনও পৌঁছেনি তার পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ—অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী—এর কাছে, যিনি ঠিক সেই সময়েই ঈদগাঁও সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রসববেদনায় ছটফট করছিলেন।
রাত ৩টার দিকে চিকিৎসকেরা অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিলে জরুরি বি-পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন হয়। গভীর রাতে মানবিক ভূমিকা রাখেন ঈদগাঁও ব্লাড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা তৌহিদুল ইসলাম; তিনি দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে রক্তের ব্যবস্থা করেন। পরে তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। ডা. তৃণা শাহা ও কর্মী মফিজুর রহমান রাতভর চেষ্টা চালিয়ে নিরাপদে অপারেশন সম্পন্ন করেন।
একটি মুহূর্তে অপারেশন থিয়েটার ভরে ওঠে নবজাতকের প্রথম কান্নায়। শিশুর জন্মের সেই শব্দ যেন নতুন আশার আলো জ্বালিয়ে দেয় পুরো ওয়ার্ডে।
কিন্তু সেই আলো ম্লান হয়ে আছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের একটি শীতল কক্ষে, যেখানে পড়ে আছে নবজাতকের বাবার নিথর দেহ। সবচেয়ে বেদনাদায়ক সত্য—অপারেশন শেষে বিছানায় শুয়ে থাকা স্ত্রী এখনও জানেনই না যে তার স্বামী আর এই পৃথিবীতে নেই।
একই দিনে, একই সময়ে-একদিকে শিশুর প্রথম কান্না, অন্যদিকে বাবার শেষ নিঃশ্বাস। এ যেন সুখ ও শোকের সবচেয়ে নির্মম সংঘর্ষ।
পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি,পূর্বশত্রুতার জেরে শাহজাহানের খাবারের পানিতে ইচ্ছাকৃতভাবে এসিড মেশানো হয়ে থাকতে পারে।
শাহজাহানের মৃত্যুতে তার এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একই সঙ্গে তাঁর পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে দ্রুত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন এলাকার বাসিন