মো: সোহেল রানা, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রাম—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকে থাকা কুমোর পল্লির ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির হুমকিতে। কাঁচামালের সংকট, বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া এবং নতুন প্রজন্মের অনাগ্রহ—সব মিলিয়ে অনেক কারিগরই বাধ্য হচ্ছেন এই পেশা ছেড়ে দিতে।
কারিগররা জানান, তাদের পূর্বপুরুষরা দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মৃৎশিল্প তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি নদী বা আশপাশের জমি থেকে কিনে এনে প্রায় ২০ ফুট নিচ থেকে উত্তোলন করতে হয়। পরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই মাটি তৈজসপত্র তৈরির উপযোগী করা হয়। এরপর কুমোরদের দক্ষ হাতে তৈরি হয়ে ওঠে নানা কারুকার্য খচিত মাটির সামগ্রী।
সুব্রত পাল নামে একজনের অভিযোগ—বর্তমান সময়ে প্লাস্টিক, স্টিল ও দস্তার তৈজসপত্র বাজার দখল করায় মাটির জিনিসের চাহিদা কমে গেছে। ফলে এই পেশায় জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আগের মতো মানুষ মাটির তৈরি পণ্য ব্যবহার করেন না বলেও তারা জানান। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে কারিগররা বলেন, এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্ম এই পেশায় আর ফিরবে না।
আক্ষেপের সঙ্গে মহন্ত পাল নামে একজন কারিগর জানান, সরকারি সহায়তার অভাব এই শিল্পকে আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একসময় পালপাড়ায় ৫০টিরও বেশি পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৬টি পরিবার এই পেশায় টিকে আছে।
এই শিল্পকে রক্ষা করতে কী ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন—এমন প্রশ্নের জবাবে জয়ন্ত পাল নামে কারিগর জানান, স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা, বিভিন্ন মেলা ও স্টলের ব্যবস্থা এবং সরকারি অনুদান পেলে পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।
ঠাকুরগাঁও বিসিক জেলা কার্যালয়ের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো:আরমান আলী জানায়, মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে তারা নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান, ঋণ সহায়তা এবং পণ্যের প্রচার-প্রসারে কাজ করছে। পালপাড়ার দুইজন কারিগরকে ইতোমধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হয়েছে। বাইরে থেকে মাটি সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন বিসিকের এই কর্মকর্তা।
কাঁচামালের সংকট, বাজারে প্রতিযোগিতা ও তরুণদের আগ্রহ কমে যাওয়া—এই তিনের চাপে ঠাকুরগাঁওয়ের কুমোর পল্লির মৃৎশিল্প আজ মারাত্মক অস্তিত্ব সংকটে। দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া না হলে হারিয়ে যাবে অঞ্চলের এই অমূল্য ঐতিহ্য।