আরিফুল ইসলাম, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধ:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার পশ্চিম ইউনিয়নের চরলাপাং- এক সময়ের প্রাণবন্ত ও সমৃদ্ধ জনপদ। ছয় সিট জুড়ে বিস্তৃত এই গ্রামের প্রতিটি কোণে ছিল জীবনের স্পন্দন। কিন্তু আজ সেই চরলাপাং হারানোর পথে। মেঘনা নদীর ভয়াল ভাঙনে একে একে হারিয়ে গেছে ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ নং সিট। এখন টিকে আছে কেবল ৬ নং সিট — সেটিই তাদের শেষ আশ্রয়, শেষ লড়াই।
নদীভাঙনের গ্রাসে ইতিহাস স্থানীয়দের ভাষায়, চরলাপাংয়ের প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
একসময় চার কিলোমিটার বিস্তৃত গ্রামটি এখন সঙ্কুচিত হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র দেড় থেকে দুই কিলোমিটার এলাকায়। প্রতিদিনই মেঘনার ঢেউ এসে নতুন জমি, ঘরবাড়ি আর স্মৃতি গিলে খাচ্ছে।
এক বৃদ্ধ গ্রামের মানুষ কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “আমরা জমি হারাইছি, ঘর হারাইছি, এখন মনটাও হারায় ফেলছি।”
শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে, বর্তমানে এই অবশিষ্ট সিটে রয়েছে- ৮টি মসজিদ, ২টি মাদ্রাসা, ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি কিন্ডারগার্টেন, ৩টি মাছ চাষের পুকুর, ২টি বাজার।
এর মধ্যে পুরাতন বাজারটি ইতোমধ্যেই নদীর গর্ভে হারিয়ে গেছে। নতুন বাজারটিও এখন ভাঙনের মুখে।
মানুষদের আশঙ্কা, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ—সবকিছু বিলীন হয়ে যাবে।
জনসংখ্যা ও জীবিকা বর্তমানে চরলাপাং গ্রামে প্রায় ৬ হাজার ভোটার রয়েছে।
তিনটি ওয়ার্ড (১, ২ ও ৩ নং) নিয়ে গঠিত এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী ও দিনমজুর।
তাদের মুখে একই আর্তনাদ- আমরা শুধু জমি হারাই নাই, শিকড় হারাইছি। এখন একটা সিটে গাদাগাদি কইরা বাঁচতাছি।”
সরকারের কাছে আবেদন- চরলাপাংবাসীরা বহুবার প্রশাসনের কাছে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও পুনর্বাসনের আবেদন করেছেন। কিন্তু আজও তেমন কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই।
এক স্থানীয় সমাজকর্মীর কণ্ঠে হাহাকার- “যদি এখনই বাঁধ না হয়, তাহলে চরলাপাং নামটা শুধু ইতিহাস বইতে থাকবে।” উপসংহার চরলাপাং আজ কেবল একটি গ্রামের নাম নয়- এটি হারিয়ে যেতে থাকা মানুষের আর্তনাদ, একটা ইতিহাসের বিলাপ।
মেঘনার ঢেউ প্রতিদিন যেন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়- “চরলাপাং কি টিকবে আগামী প্রজন্মের মানচিত্রে?”
গ্রামবাসীর শেষ প্রার্থনা একটাই — “আমাদের বাঁচান, আমাদের চরলাপাং বাঁচান।”